নাফাখুম জলপ্রপাত, থানচি, বান্দরবান।



বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি স্থানটি সাঙ্গু নদীর উজানে একটি মারমা বসতী মারমা ভাষায়খুমমানে হচ্ছে জলপ্রপাত রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে, যার নামনাফাখুম রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ এই নাফাখুম, নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে নেমে গেছে প্রায় ২৫-৩০ ফুট, প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত! সূর্যের আলোয় যেখানে নিত্য খেলা করে বর্ণিল রংধনু ভরা বর্ষায় রেমাক্রি খালের জলপ্রবাহ নিতান্ত কম নয় প্রায় যেন উজানের সাঙ্গু নদীর মতই পানি প্রবাহের ভলিউমের দিক থেকে নাফাখুম- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত

 বর্ষাকালে ঝর্না দিয়ে তীব্র গতীতে পানি নিচের দিকে পতিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে তীব্রতা কমে যায় ঝরনার আকার ছোট হয়ে আসে। তবে যারা নাফাখুম ঝর্নার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে চান তারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে ভ্রমণ করলে তা দেখতে পারবেন। এই সময় উপর থেকে আছড়ে পড়া পানির প্রচন্ড আঘাতে ঝর্নার চারপাশে অনেকটা স্থান জুড়ে সৃষ্টি হয় ঘন কুয়াশার সেই সাথে উপর থেকে নিচে পানি পতিত হওয়ার আওয়াজ তো রয়েছেই। বাতাসের সাথে উড়ে যাওয়া পানির বিন্দু পর্যটকদের দেহ মন সব আনন্দে ভিজিয়ে দেয়। যা কিনা মুহুর্তের মধ্যে যে কারো মন ভালো করতে সক্ষম


বান্দরবান থেকে নাফাখুম যাওয়ার পথে পর্যটকদের তিন্দু বড় পাথর নামক দুটি স্থান পাড়ি দিতে হয়। অসাধারণ সুন্দর এই তিন্দুতে একটি বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে। তিন্দুতে পর্যটকদের জন্য রাতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে


 তিন্দু থেকে কিছুটা পথ সামনে এগোলেই বড় পাথর। স্থানীয়দের বিশ্বাস চলতি পথে এই পাথরকে সম্মান প্রদর্শন করতে হয় নতুবা যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্থানীয় লোকজন এই পাথরকে রাজা পাথর বলে সম্বোধন করেন



 
বড় পাথর থেকে ঘন্টা খানেকের পথ পাড়ি দিলেই রেমাক্রী বাজারের দেখা মিলবে। তিন্দু বড় পাথর স্থানদুটো পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা নাফাখুম ঝর্না দেখার সবচাইতে বড় আনন্দ

এই স্থানের কিছু কিছু পাহাড় বেশ উঁচু। দেখে মনে হবে সেই পাহাড়গুলোর চূড়া মেঘের আবরণে ঢাকা পড়েছে। পাহাড়ের ঢালের মাঝে রয়েছে টিনের ঘরবাড়ি। এখানকার নদীগুলোর গভীরতা খুব কম। কোনো কোনো স্থানে পানির নিচের মাটি দেখা যায়। তবে নদীগুলোতে সবসময় প্রচন্ড স্রোত থাকে। তাই পথ চলতে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়



কিভাবে যাবেন:
বান্দরবান শহর থেকে থানচি উপজেলা সদরের দূরত্ব ৮২ কিঃমিঃ। রিজার্ভ চাঁদের গাড়ীতে বান্দরবান থেকে থানচি যেতে সময় লাগবে ঘন্টা, ভাড়া নেবে হাজার টাকা। থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকায় যাওয়া-আসা, ভাড়া চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বর্ষায় ইঞ্জিনবোটে থানচি থেকে তিন্দু যেতে সময় লাগবে আড়াই ঘন্টা। তিন্দু থেকে রেমাক্রি যেতে লাগবে আরও আড়াই ঘন্টা। এই পাঁচ ঘন্টার নৌ-পথে আপনি উজান ঠেলে উপরের দিকে উঠতে থাকবেন। শীতের সময় ইঞ্জিন বোট চলার মত নদীতে যথেষ্ট গভীরতা থাকেনা। তখন ঠ্যালা নৌকাই একমাত্র বাহন। বর্ষা মৌসুমে তিন দিনের জন্য ইঞ্জিনবোটের ভাড়া পড়বে থেকে হাজার টাকা। আর শীত মৌসুমে ঠ্যালা-নৌকার ভাড়া পড়বে প্রতি দিনের জন্য ১০০০ টাকা



 
গাইড:

থানচি থেকে গাইড নেয়াটা বাধ্যতামূলক। থানচি বিজিবি ক্যাম্পে গাইডদের একটি তালিকা আছে। সেখান হতে একজন গাইড নিতে হবে। সাথে কাগজে সব টুরিষ্টদের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, ফোন নাম্বার, মাঝির নাম ইত্যাদি জমা দিয়ে নাফাখুম যাবার অনুমতি নিতে হবে




থাকার ব্যবস্থা কি:
পর্যটকদের থাকার জন্য থানচিতে একটি রাষ্ট্রীয় রেষ্ট হাউজ রয়েছে। এছাড়া থানচি বাজারে কিছু গেস্ট হাউজ আছে সেখানে রাত্রী যাপন করা যাবে ভাড়া জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকার মত। এছাড়া রেমাক্রী বাজারে আদিবাসীদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা আছে জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা করে রাত্রী যাপন করতে পারবেন। এছাড়াও যারা ক্যাম্পিং করতে চান তারা বাজারের আশেপাশে কোথাও ক্যাম্প করতে পারবেন তবে তেমন ভালো মনপুত জায়গা নেই ক্যাম্পিং এর জন্য। শীতকাল হলে বাজারের ঘাটে শুকনা জায়গায় ক্যাম্প করতে পারেন
তিন্দুতে পর্যটকদের থাকার জন্য উপজাতীয়দের ঘর রয়েছে। নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে উপজাতীয়রা এসব ঘর পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেয়। রেমাক্রী বাজারেও একটি রেষ্ট হাউজ রয়েছে